মুনিয়ার মৃ’ত্যুতে যেভাবে ফেঁ’সে যাচ্ছে হুইপ পুত্র শারুন

কলেজ শিক্ষার্থী মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝু’লন্ত লা’শ উ’দ্ধারের ঘ’টনায় জাতীয় সংসদের হুইপ ও চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর ছেলে নাজমুল করিম চৌধুরী শারুনের বি’রুদ্ধে হ’ত্যা মা’মলার আবেদন করা হয়েছে।

রোববার ঢাকা মহানগর হাকিম মোর্শেদ আ’ল মামুন ভুঁইয়ার আ’দালতে এ মা’মলার আবেদন করেন মুনিয়ার ভাই আশিকুর রহমান। গত ২৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের একটি ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝু’লন্ত লা’শ উ’দ্ধার ক’রে পু’লিশ।

ওই দিন মুনিয়ার বড় বোন বা’দী হয়ে প্র’রোচনার অ’ভিযোগ এনে গুলশান থা’নায় একজনকে আ’সামি করে মা’মলা করেছিলেন। মুনিয়ার ঝু’লন্ত লা’শ উ’দ্ধারের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুনিয়া ও শারুনের কথোপকথনের কয়েকটি স্ক্রিনশট ছ’ড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীকে জি’জ্ঞাসাবা’দ করেছে পু’লিশ।

শারুন সাংবাদিকদের জানান, মুনিয়ার স’ঙ্গে তার প’রিচয় ছিল। গত বছর হোয়াটসঅ্যাপে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে মেয়েটি। তখন শারুন তাকে জানান- মুনিয়া যার স’ঙ্গে স’ম্পর্কে জ’ড়িয়েছেন, সেই একই ব্যক্তির স’ঙ্গে তার সাবেক স্ত্রীর স’ম্পর্ক ছিল।

স্ক্রিনশটে দেখা যায় শারুন মুনিয়াকে লেখে ‘তুমি কিছু করলে বসুন্ধরা গ্রুপ শে’ষ হয়ে যাবে’। অনেকেই বলাবলি করছেন, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরকে ফাঁ’সিয়ে মধুর প্রতিশো’ধ নিতেই কী তাহলে মুনিয়াকে আ’ত্মহননে

প্র’রোচিত করেছেন শারুন? শুধু তাই নয়, ফাঁ’স হওয়া চ্যাট থেকে স্প’ষ্ট অনেক আগে থেকেই মুনিয়ার স’ঙ্গে অ’নৈতিক অ’ন্তর’ঙ্গ স’ম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন হুইপপুত্র।

ত’রুণীটির স’ঙ্গে ক্যাসিনো বি’রোধী অ’ভিযানে গ্রে’ফতার হওয়া ব’হিস্কৃত যুবলীগ নেতা ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটেরও অ’বৈধ সম্পর্ক ছিল, এটিও বেরিয়ে এসেছে ফাঁ’স হওয়া চ্যাট থেকেই। সেই চ্যাটে মুনিয়া শারুনকে লিখেছেন- ‘সম্রাট চলে যাওয়ার পর আপনি তো জানেন আমি কতো ক’ষ্টে ছিলাম।

আর লাস্ট ইয়ারে তো আমি খুবই ক’ষ্টে ছিলাম। আপনি ওই টাইমে আমার পাশে না থাকলে আমি কী করতাম জানি না।’ ইতোমধ্যেই এসব চ্যাট গ’ণমাধ্যমের হাতে এসেছে।

জানা যায়, শারুন-মুনিয়া নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। হোয়াটসআপে ও টেলিগ্রামে নিয়মিত বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর সংক্রা’ন্ত বিভিন্ন আপডেট শারুনকে জানাতেন মুনিয়া। শারুন কায়দা কৌশল করে মুনিয়াকে নানাভাবেই আনভীরের বি’রুদ্ধে উ’স্কে দেওয়ার চে’ষ্টা করতেন।

মুনিয়ার ভাষায় হুইপুত্র যেন সাক্ষাৎ এক ফেরেশতা! এদিকে, মোসারাত জাহান মুনিয়ার ঝু’লন্ত লা’শ উ’দ্ধারের পর প্র’রোচনা মা’মলার ত’দন্ত শুরু করেছে পু’লিশ। হুইপপুত্র শারুন চৌধুরীর স’ঙ্গে মুনিয়ার কিছু কথোপকথনের স্ক্রিনশটের সূত্র ধ’রে মঙ্গলবার বিকেলে একটি সূত্র তাঁর কাছে কিছু ত’থ্য জানতে চায়।

শারুন বলেন, সূ’ত্রের জানতে চাওয়া বিষয়গুলো তিনি জানিয়েছেন। তবে কে তাঁকে ফোন করেছিলেন, সে ব্যাপারে হুইপপুত্র কিছু বলতে চাননি। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার হতে থাকে, মৃ’ত্যুর আগে শারুন চৌধুরীর সঙ্গে মোসারাত জাহান মুনিয়ার কথা হয়েছিল। এ কারণেই শারুনের স’ঙ্গে কথা বলে ওই সূত্র।

শারুন বলেন, তাঁর কাছ থেকে বিকেলে একটি সূত্র মোসারাতের স’ঙ্গে কথোপকথনের প্রতি ই’ঙ্গিত দিয়ে জানতে চেয়েছে, তিনি মোসারাতকে চেনেন কি না। শারুন জানান, মোসারাতের স’ঙ্গে তাঁর প’রিচয় ছিল। গত বছর মোসারাত ফেসবুকে তাঁর স’ঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনিই তাঁকে জানান, বসুন্ধরার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের স’ঙ্গে তাঁর সাবেক স্ত্রীর স’ম্পর্ক হয়েছে।

তবে শারুনের দা’বি, মোসারাতের মৃ’ত্যুর পর ফেসবুকে তাঁর স’ঙ্গে কথোপকথনের যে স্ক্রিনশট ছ’ড়ানো হচ্ছে, সেগুলো মি’থ্যা। স’ত্য-মি’থ্যা যাচাইয়ে এই কথোপকথনগুলোর ফরেনসিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও দা’বি জানিয়েছেন শারুন।

মুনিয়াও শারুনকে আক্ষেপ করে বলতেন, ‘আপনার লাইফে আপনার ওয়াইফের আগে যদি আমি আসতাম।’ এর উত্তরে শারুন বলেছেন, ‘আমি ভালো মানুষ না। জাস্ট উপকার করি।’ কোন কোন চ্যাটে মুনিয়া লিখেছেন, ‘আমার আপনার ভেতরে যা হয়েছে ওইটা কেউ জানবে না। আপনি আমার জন্য অনেক করেছেন।’

নিজেদের মধ্যকার এসব চ্যাট নিয়ে অবশ্য উৎকন্ঠায় ছিলেন শারুন। সেই কথাই জানিয়েছিলেন মুনিয়াকে। উত্তরে মুনিয়া লিখেছিলেন ‘জি না, আমি ডিলিট করে দেই সব।’ এর আগে গত সোমবার সন্ধ্যার পর গুলশান-২-এর ১২০ নম্বর রোডের ১৯ নম্বর ফ্ল্যাট থেকে মোসারাত জাহান (মুনিয়া) নামের এক ত’রুণীর মর’দেহ উ’দ্ধার করে পু’লিশ।

মুনিয়ার লা’শ উ’দ্ধার নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝ’ড় বইছে। আলোচনা-সমালোচনার স’ঙ্গে চলছে প্রতিবা’দ। মুনিয়ার মৃ’ত্যুতে জ’ড়িত ব্যক্তিকে দ্রু’ত আ’ইনের আওতায় আনা এবং ন্যা’য় বি’চারের দা’বি করছেন অনেকেই।

এদিকে প’রিবারের দা’বি, মুনিয়ার মৃ’ত্যু একটি প’রিকল্পিত হ’ত্যাকা’ণ্ড। দী’র্ঘ স’ম্পর্কের কিছু ছবি, ভিডিও এবং ড’কুমেন্টস মুনিয়ার মোবাইল ফোনে সংগ্রহ ছিল। ড’কুমেন্টগুলো উ’দ্ধারের জন্য ৫০ লাখ টাকা চু’রির মি’থ্যা অপবা’দ, মা’নসিকভাবে হ্যা’রেজমে’ন্ট করা হয়।

বুধবার (২৮ এপ্রিল) সকালে এই কথাগুলো বলেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। তিনি বলেন, ‘সর্বশে’ষ গত ৪ এপ্রিল কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকায় অরণী ভবনে মোসারাত জাহান মুনিয়া বোনের বাসায় আসে। ১২ এপ্রিল ঢাকায় ফিরে যায়।

ফেরার সময় বলে গিয়েছিল সায়েম সোবহান আনভীর দেশে আসছেন। আমাকে বলছে ঢাকায় ফিরে যাওয়ার জন্য।’ বোন নুসরাত আরও বলেন, ‘মুনিয়া কুমিল্লায় যে কয়দিন ছিল প্রায় বলতো, আনভীর তার মোবাইল ফোন অ’সংখ্যবার ছি’নিয়ে নেওয়ার এবং লু’কানোর চে’ষ্টা করে।

বনানী থেকে গুলশানে ওঠার আগে কুমিল্লায় চলে আসে মুনিয়া। তখন সে বলেছিল, আনভীর মোবাইল ফোন নেওয়ার চে’ষ্টা করেছিল, কিন্তু পারেনি। মোবাইলে থাকা স’ম্পর্কের ড’কুমেন্টস উ’দ্ধারের জন্যই আনভীর আমার বো’নকে প’রিকল্পিতভাবে হ’ত্যা করেছে।’

এদিকে মা’মলাটি চারটি বিষয় সামনে রেখে ত’দন্ত করছে পু’লিশ। মা’মলার ত’দন্ত তদারক কর্মক’র্তা পু’লিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বুধবার এ ত’থ্য জানান। তিনি জানান, ঘ’টনাটিকে গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী ত’দন্ত শুরু করেছি। ত’দন্তের স্বার্থে যা যা করার দরকার সবই করবো।

মা’মলার ত’দন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মূলত চারটি বিষয় রেখে মা’মলাটির ত’দন্ত হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে মুনিয়ার সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারসহ এ ধ’রনের প্ল্যাটফর্মে কাদের যোগাযোগ ছিল তা খ’তিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ছাড়া মা’মলার এজাহারে পিয়াসা নামে এক মে’য়ের নাম এসেছে, যার পুরো নাম ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা। তিনি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলের সাবেক স্ত্রী। মুনিয়ার মৃ’ত্যুর ঘ’টনায় তার যোগসূত্র কীভাবে তাও খ’তিয়ে দেখা হচ্ছে।

এদিকে, মুনিয়া হ’ত্যা মা’মলার ফরেনসিক রিপোর্ট পেতে আরও দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সেই রিপোর্ট হাতে পেলেই উন্মোচিত হবে মুনিয়ার মৃ’ত্যুর প্রকৃত র’হস্য।